নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি
হাদিস শরিফে রাসুল (স.) বলেন???
আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল- নামাজ। যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল। (মুসনাদে আহামদ)
নামাজ পড়া যেমন অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে নামাজ পড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ এর শুরু থেকে নিয়ে শেষ পযন্ত আজকে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
নামাজ এর নিয়ত করা কতটা জরুরি।
নামাজ এর নিয়ত ছাড়া নামাজ হবে না। আর নিয়ত করা বলতে নিয়ত পড়াকে বোঝায় না। আপনি যদি আছর নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য ওজু করতে যান। তখন ই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ মন এর বিষয়। আপনার মন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনাকে কিসের নামাজ পড়ছেন।
নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি।
ফরজ হচ্ছে শরীয়ত এর দৃষ্টিকোন থেকে বাধ্যতামূলক একটি কাজ। নামাজ এ যদি আপনি কোন ফরজ বাদ দেন তাহলে আপনার নামাজ হবে না। আপনাকে পুনরায় নামাজ পড়তে হবে। নামাজের মোট ১৩ টি ফরজ রয়েছে।
নামাজের বাইরে সাতটি ফরজ রয়েছে।
শরীর পাক, কাপড় পাক, নামাজের যায়গা পাক, সতর ঢাকা, কেবলামুখী হওয়া, ওয়াক্তমত নামাজ পড়া, নামাজের নিয়ত করা।
নামাজের ভিতরে ছয় ফরজ রয়েছে।
তাকবিরে তাহরিমা বলা, দাঁরিয়ে নামাজ পড়া, কিরাত পড়া, রুকু করা, দুই সেজদা করা, শেষ বৈঠক।
নামাজের মধ্যে যদি কেউ এই কাজগুলো না করে তাহলে তাকে পুনরায় নতুন করে নামাজ পড়তে হবে। সাহু সিজদাহ্ দিলে ও নামাজ হবে না। নামাজ এর মধ্যে অনেক গুলো ওয়াজিব রয়েছে। যেগুলো ও বাধ্যতা মানতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ভুল হলে সাহু সিজদাহ্ দিলে নামাজ হয়ে যাবে।
নামাজের ওয়াজিব 14 টি কি কি।
০১. প্রত্যেক নামাজে সুরা ফাতিহা (আলহামদুলিল্লাহ) পড়া।
০২. প্রত্যেক নামাজে সুরা ফাতিহার পর সুরা মিলনো [ কমপক্ষে তিন আয়াত অথবা তিন আয়াতের সমকক্ষ এক আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা ]।
০৩. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতকে কিরাতের জন্য নির্ধারিত করা।
০৪. কিরাআত, রুকু, সিজদার মধ্যে ক্রমধারা বা তারতিব ঠিক রাখা।
০৫. কাওমা করা অর্থাৎ রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
০৬. জলসা করা অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
০৭. রুকু, সিজদা, কাওমা, জলসায় কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ স্থির থাকা। যাতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যথাস্থানে পৌঁছে যায়।
০৮. তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকাআত পর আত্তাহিয়াতু পড়া বা সম-পরিমাণ সময় বসা।
০৯. প্রথম ও শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া।
১০. জাহেরি নামাজে প্রথম দুই রাকাআত ইমামের জন্য উচ্চস্বরে কিরাআত পড়া এবং সিররি নামাজের মধ্যে ইমাম ও একাকি নামাজির অনুচ্চ শব্দে কিরাআত পড়া।
১১. প্রত্যেক রাকাআতের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলোর তারতিব (ধারাবাহিকতা) ঠিক রাখা।
১২. বিতরের নামাজের দোয়ায়ে কুনুত পড়ার জন্য অতিরিক্ত তাকবির বলা এবং দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
১৩. দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় ছয় তাকবির বলা।
১৪. সালাম ফিরানো। অর্থাৎ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে নামাজ শেষ করা।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা নামাজ এর ফরজ ও ওয়াজিব গুলো জেনে নিলাম। এছাড়াও নামাজ এ অনেক সুন্নত ও মুস্তাহাব রয়েছে। নামাজের মধ্যে এর কোথাও ভুল হলে নামাজ এর কোন ক্ষতি হবে না। সাহু সিজদাহ্ দেওয়ার ও প্রয়োজন হবে না।
নামাজের ধারাবাহিক নিয়ম সমূহ ।
১. হাত বাঁধা [ আল্লাহু আকবর ] বলে।
২. ছানা পাঠ করা।
৩. সূরা ফাতিহা পড়া।
৪. সূরা ফাতিহা এর সাথে সূরা মিলানো।
৫. “আল্লাহু আকবর” বলে রুকুতে যাওয়া।
৬. রুকুতে ৩/৫/৭ বার ‘সুবাহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়া।
৭. “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলে রুকু থেকে উঠা।
৮. “আল্লাহু আকবর ” বলে সিজদাহ্ তে যাওয়া।
৯. সিজদাহ্তে ৩/৫/৭ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়া।
১০. “আল্লাহু আকবর” বলে সিজদাহ্ থেকে বসা ও পুনরায় “আল্লাহ আকবার” বলে সিজদাহ্তে যাওয়া।
১১. “আল্লাহু আকবর” বলে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাআত এর মতো দ্বিতীয় রাকাআত পড়া।
১২. দুই রাকাআত বিশিষ্ট নামাজ হলে দ্বিতীয় রাকাআত শেষ বসে,,, তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানো।
১৩. চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজ হলে দ্বিতীয় রাকাআত শেষে,, তাশাহুদ পরে ” আল্লাহু আকবর” বলে দাঁড়িয়ে যাওয়া।
১৪. যদি ফরজ সালাত হয় শুধু সূরা ফাতিহা দিয়ে পরবর্তী রাকাআত শেষ করা। সুন্নত হলে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানো ও বাকি নিয়ম মেনে সালাত শেষ করা।
১৫. বিতর সালাত এর সময় তৃতীয় রাকাআত এ। সূরা ফাতিহা ও সূরা মেলানোর পর তাকবির দিয়ে দোয়া কুনুত পড়া।
১৬. নামাজ এর সর্বশেষ রাকাআত এ তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানো।
নামাজের মধ্যে আমরা যে দোয়া করতে পারি ।
রুকু হতে দাঁড়িয়ে সিজদাহ্ এর পূর্বে যে দেওয়া পরব।
দোয়া: “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান কাছিরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফিহি।”
অর্থ : “হে আমাদের প্রতিপালক! আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা; অঢেল, পবিত্র ও বরকত-রয়েছে-এমন প্রশংসা।” (বুখারি)
দুই সিজদাহ্ এর মাঝখানে যে দোয়া পড়ব।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি। (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা নামাজ এর অনেক গুলো বিষয় জানতে পারলাম। উপরোক্ত তথ্য গুলোর মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে বা আপনার কোন মতামত থাকে তাহলে তা কমেন্ট এ জানাতে ভুলবেন না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সহ সকলকে সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। “আমিন”
আপনি যদি ব্লগ বা ই কমার্স ওয়েবসাইট কিনতে চান। তাহলে আমদের সাথে যোগাযোগ করুন। ফেসবুক