আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমরা অনুজীব কাকে বলে। অনুজীব বিজ্ঞান কাকে বলে। অনুজীবের বৈশিষ্ট্য। অনুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা। এই বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
অনুজীব বিজ্ঞানের জনক কে?
অ্যান্থনি ভন লিউয়েনহুক (Anthony van Leeuwenhoek) কে আধুনিক অনুজীব বিজ্ঞান এর জনক বলা হয়। এছারাও সে কোষতত্ত্ব এর জনক। অ্যান্থনি ভন লিউয়েনহুক সর্ব প্রথম অনুজীব আবিস্কার করেন।
Microbiology কি কি শব্দ নিয়ে গঠিত?
তিনটি শব্দ নিয়ে microbiology শব্দটি গঠিত। এগুলো হলো micros, bios এবং logos নিয়ে microbiology শব্দটি গঠিত।
অনুজীব কাকে বলে?
যেসব অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না। যাদের দেখতে শক্তিশালী অনুবীক্ষন যন্ত্রের প্রয়োজন হয় তাদের অনুজীব বলে।
অনুজীবের উদাহরণ?
কিছু অনুজীব হলো: mycoplasma, Rickettsia, Prion, Bacteria ইত্যাদি
অনুজীব বিজ্ঞান কাকে বলে?
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় অতি ক্ষুদ্র অণুবীক্ষণিক জীবের আবিষ্কার, আবাসভূমি, শারীরিক গঠন, কার্যাবলি, বিস্তার ও অন্যান্য জীব ও পরিবেশের সাথে তাদের সম্পর্কে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় তাকে অণুজীববিজ্ঞান বলা হয় ।
অনুজীব বিজ্ঞান এর শাখা সমূহ?
অণুজীববিজ্ঞানের শাখাসমূহের নাম নিচে দেওয়া হলো:
১. কৃষি অণুজীববিজ্ঞান।
২. শিল্প অণুজীববিজ্ঞান।
৩. পরিবেশ অণুজীববিজ্ঞান।
৪. ভূ-রাসায়নিক অণুজীববিজ্ঞান।
৫. জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ক অণুজীববিজ্ঞান।
৬. বহির্বিশ্ব অণুজীববিজ্ঞান।
৭. বায়ুমণ্ডলের অণুজীববিজ্ঞান।
৮. খাদ্য অণুজীববিজ্ঞান।
৯. চিকিৎসা অণুজীববিজ্ঞান।
১০. স্বাদু-পানির অণুজীববিজ্ঞান ও
১১. সামুদ্রিক অণুজীববিজ্ঞান ।
অনুজীবের বৈশিষ্ট্য কি কি?
অনুজীব এর কিছু বৈশিষ্ট্য:
- অনুজীব অনুবীক্ষনিক।
- অনুজীব আদিকোষী বা প্রকৃতকোষী।
- অনুজীবসমূহ স্বভোজী ও পরভোজী হয়ে থাকে।
- অনুজীব অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন।
- অনুজীব সংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকে।
- অনুজীব সঞ্চারণ ক্ষমতা সম্পন্ন।
- অনুজীব প্রতিরোধিতা ক্ষমতা সম্পন্ন।
- আকার: অনুজীবগুলির আকার
খুব ছোট। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত 1 থেকে 5 মাইক্রোমিটার লম্বা হয়, ভাইরাস
0.02 থেকে 0.2 মাইক্রোমিটার লম্বা হয়, ছত্রাক 0.5 থেকে 100 মাইক্রোমিটার
লম্বা হয়, এবং প্রোটোজোয়া 10 থেকে 100 মাইক্রোমিটার লম্বা হয়।
- কোষের গঠন: অনুজীবগুলির
কোষগুলি ইউক্যারিওটিক বা প্রোকারিওটিক হতে পারে। ইউক্যারিওটিক কোষগুলিতে
একটি কোষের নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য অর্গানেল থাকে, যেখানে প্রোকারিওটিক
কোষগুলিতে একটি কোষের নিউক্লিয়াস থাকে না। - বিপাক: অনুজীবগুলির বিপাক বিভিন্ন হতে পারে। কিছু অনুজীব অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, অন্যরা অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে।
- বৃদ্ধি: অনুজীবগুলি সাধারণত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কিছু অনুজীব মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে।
- প্রজনন: অনুজীবগুলি
বিভিন্নভাবে প্রজনন করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বিভাজনের মাধ্যমে
প্রজনন করে, ভাইরাস কোষের ভিতরে প্রতিলিপি তৈরি করে, ছত্রাক কোষ বিভাজন,
পুনরুৎপাদন, বা বীজের মাধ্যমে প্রজনন করে, এবং প্রোটোজোয়া বিভাজন,
পুনরুৎপাদন, বা যৌন প্রজননের মাধ্যমে প্রজনন করে। - পরিবেশগত ভূমিকা: অনুজীবগুলি পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা খাদ্য উৎপাদন, পচন, এবং পুষ্টি চক্রের জন্য প্রয়োজনীয়।
- রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতা: কিছু অনুজীব রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, এবং প্রোটোজোয়া সবই রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
- ব্যবহার: অনুজীবগুলি
বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা খাদ্য উৎপাদন, ওষুধ তৈরি,
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
অনুজীবের উপকারিতা ?
অনুজীবের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিছু সাধারণ উপকারিতা হল:
- খাদ্য উৎপাদন: অনুজীবগুলি
খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা দুধ থেকে দই তৈরি করে,
গাঁজন করে অ্যালকোহল তৈরি করে, এবং রুটি উৎপাদনে সাহায্য করে। - ঔষধ তৈরি: অনুজীবগুলি ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিবায়োটিক, এবং ভিটামিনগুলি সবই অনুজীব থেকে তৈরি হয়।
- পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা:
অনুজীবগুলি পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তারা পচন প্রক্রিয়াতে অংশ নেয়, যা মৃত পদার্থকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে। - কৃষি: অনুজীবগুলি কৃষিক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা মাটিকে উর্বর করে তোলে এবং ফসলের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অনুজীবের কিছু নির্দিষ্ট উপকারিতা হল:
- অন্ত্রের স্বাস্থ্য:
মানবদেহে একটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা রয়েছে, যা অন্ত্রের
স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই মাইক্রোবায়োটার
বেশিরভাগই ব্যাকটেরিয়া, যা খাদ্য হজম, ভিটামিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি,
এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। - খাদ্যের পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি:
কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক খাবারের পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া দুধ থেকে দই তৈরি করে, যা
ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের একটি ভালো উৎস। - পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ:
কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু ব্যাকটেরিয়া জল থেকে তেল এবং অন্যান্য দূষক অপসারণ
করতে পারে।
অনুজীবগুলি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনুজীবের অপকারিতা ?
অনুজীবের কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কিছু সাধারণ অপকারিতা হল:
- রোগ সৃষ্টি: কিছু অনুজীব রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, এবং প্রোটোজোয়া সবই রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
- খাদ্য পচন: কিছু অনুজীব খাদ্য পচন ঘটাতে পারে। এটি খাদ্য নষ্ট করে এবং খাদ্যে সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
- পরিবেশ দূষণ: কিছু অনুজীব পরিবেশ দূষণে অবদান রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ব্যাকটেরিয়া জল এবং মাটিকে দূষিত করতে পারে।
- কৃষি ক্ষতি: কিছু অনুজীব ফসল এবং গাছপালা ক্ষতি করতে পারে।
অনুজীবের কিছু নির্দিষ্ট অপকারিতা হল:
- রোগ: কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, এবং ম্যালেরিয়া হল কিছু সাধারণ রোগ যা অনুজীব দ্বারা সৃষ্ট হয়।
- খাদ্য পচন: খাদ্য পচন খাদ্য নষ্ট করে এবং খাদ্যে সংক্রমণের কারণ হতে পারে। এটি খাদ্যবাহিত রোগের কারণ হতে পারে।
- পরিবেশ দূষণ: কিছু অনুজীব জল এবং মাটিকে দূষিত করতে পারে। এটি অন্যান্য জীবের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
- কৃষি ক্ষতি: কিছু অনুজীব ফসল এবং গাছপালা ক্ষতি করতে পারে। এটি খাদ্য উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
অনুজীবগুলি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাইহোক, অনুজীবগুলির কিছু অপকারিতাও রয়েছে যা আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
আপনি যদি ব্লগ বা ই কমার্স ওয়েবসাইট কিনতে চান। তাহলে আমদের সাথে যোগাযোগ করুন। ফেসবুক