ভাইরাস (Virus) কি। ভাইরাস কাকে বলে। ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য। ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা।

আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ভাইরাস (Virus) কি? ভাইরাস কাকে বলে? ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য? ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা?

ভাইরাস (Virus) কি। ভাইরাস কাকে বলে। ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য। ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা।

ভাইরাস কি? 

ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। এর অর্থ হল বিষ ( poison)।

ভাইরাস (Virus) কাকে বলে? 

নিউক্লেয়িক এসিড ও প্রোটিন এর সমন্বয়ে গঠিত যে অতি অনুবিক্ষণিক অকোষীয় পরজীবী পোষক দেহে রোগ সৃষ্টিসহ বিশেষ বিশেষ রোগ সৃষ্টিতে সক্ষম কিন্তু সজীব কোষের বাইরে জড় বস্তুর ন্যায় আচরণ করে সেসব পরজীবীকে ভাইরাস বলে।

ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য কি কি? 

ভাইরাস জীব না জড় পদার্থ সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ এরা পোষক দেহের ভিতরে জীব ও পোষক দেহের বাহিরে জড় বস্তুর ন্যায় আচরণ করে। তাই এদের কিছু জীব ও কিছু জাড় বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

ভাইরাসের জীব বৈশিষ্ট্য কি কি?

  • ভাইরাস বংশবিস্তার করতে সক্ষম।
  • ভাইরাসের দেহে DNA অথবা RNA নামক বংশগতীয় বস্তু বিদ্যমান।
  • প্রজনন ক্ষমতা বিদ্যামান।
  • সহজেই মিউটেশন ঘটে যার ফলে রেস বা জাতের পরিবর্তন ঘটে।
  • ভাইরাসের জেনেটিক রিকম্বিনেশন ঘটে।
  • ভাইরাসের অ্যান্টিজেনিক ধর্ম বিদ্যামান।
  • ভাইরাস সুনির্দিষ্ট ও বাধ্যতামূলক পরজীবী।

ভাইরাসের জড় বৈশিষ্ট কি কি ?

  • পোষক দেহের বাইরে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় জড় পদার্থ।
  • ভাইরাস দেহে কোষপ্রাচীর, কোষঝিল্লি কিংবা সাইটোপ্লাজম সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
  • ভাইরাসকে কেলাসিত করা যায়।
  • খাদ্য গ্রহণ করে না।
  • নিজস্ব কোন বিপাকীয় ক্ষমতা নেই।
  • বংশ বিস্তার করে না ও বাহিরের উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না।
  • ভাইরাসের আয়তন কখনো বৃদ্ধি পায় না।

ভাইরাসের উপকারিতা?

ভাইরাস সাধারণত রোগের কারণ হিসেবে পরিচিত, তবে এর কিছু উপকারিতাও রয়েছে। ভাইরাসের কিছু উপকারিতা নিম্নরূপ:

খাদ্য সংরক্ষণে সাহায্য করে: ভাইরাস খাদ্য পচন রোধে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি দই এবং কেফির প্রক্রিয়াজাত করার সময় ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এই ভাইরাসগুলি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং বংশবৃদ্ধি রোধ করে, যার ফলে খাদ্যের পচন হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

ঔষধ উৎপাদনে সাহায্য করে: ভাইরাস বিভিন্ন ধরণের ঔষধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইনসুলিন, একটি হরমোন যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অপরিহার্য, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়, যা ইনসুলিন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।

ওষুধ গবেষণায় সাহায্য করে: ভাইরাস বিভিন্ন ধরণের ওষুধ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য নতুন ওষুধ তৈরির জন্য ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এই ভাইরাসগুলি ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে বা তাদের বৃদ্ধি এবং বংশবৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

জীববিদ্যা গবেষণায় সাহায্য করে: ভাইরাস জীববিদ্যা গবেষণায় একটি মূল্যবান হাতিয়ার। উদাহরণস্বরূপ, ভাইরাসগুলি জিনগত তথ্য স্থানান্তর করতে ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে জেনেটিক ট্রান্সডাকশন বলা হয়। ভাইরাসগুলি ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা জিনগুলির আচরণ এবং ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে আরও জানতে পারেন।

ভাইরাল ভেকটিল: ভাইরাসগুলি জীবিত বাহক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যা অন্য কোষে জিনগত তথ্য স্থানান্তর করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে জেনেটিক ট্রান্সডাকশন বলা হয়। ভাইরাল ভেকটিলগুলিকে কৃত্রিম জিনগুলিকে কোষে প্রবেশ করানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা জিন থেরাপির জন্য একটি সম্ভাব্য পদ্ধতি।

ভাইরাল থেরাপি: ভাইরাসগুলি ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে ভাইরাল থেরাপি বলা হয়। ভাইরাল থেরাপির জন্য ব্যবহৃত কিছু ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে এডেনোভাইরাস, ক্যাপসিডোভাইরাস এবং ল্যামিভাইরাস।

ভাইরাল ভ্যাক্সিন: ভাইরাসগুলি ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটিকে ভাইরাল ভ্যাকসিনেশন বলা হয়। ভাইরাল ভ্যাকসিনগুলির জন্য ব্যবহৃত কিছু ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, পোলিও ভাইরাস এবং রুবেলা ভাইরাস।

ভাইরাসের অপকারিতা?

ভাইরাস সাধারণত রোগের কারণ হিসেবে পরিচিত, তাই এর অপকারিতাই বেশি। ভাইরাসের কিছু অপকারিতা নিম্নরূপ:

রোগের কারণ: ভাইরাস বিভিন্ন ধরণের রোগের কারণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সর্দি, ফ্লু, মাম্পস, হার্পিস, এইচআইভি/এইডস, ডেঙ্গু এবং ইবোলা। এই রোগগুলি গুরুতর থেকে মারাত্মক হতে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি: ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগগুলি অর্থনৈতিক ক্ষতি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সর্দি এবং ফ্লু কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং শ্রম অনুপস্থিতির কারণ হতে পারে। এইচআইভি/এইডস চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং রোগীদের কাজ করার ক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।

মৃত্যু: কিছু ভাইরাসের কারণে মৃত্যু হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এইচআইভি/এইডস, ডেঙ্গু এবং ইবোলা রোগগুলি মারাত্মক হতে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

সংক্রামক রোগের কারণ: ভাইরাস সংক্রামক হতে পারে, যার অর্থ তারা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভাইরাসগুলি বাতাস, তরল, দূষিত বস্তু বা পোকামাকড় দ্বারা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ: কিছু ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হতে পারে, যার অর্থ সেগুলি থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস সি এবং হার্পিস জীবদ্দশার জন্য থাকতে পারে।

ক্ষতিকারক জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে: ভাইরাসগুলি কোষের জিনগত উপাদানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ক্ষতিকারক জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এই পরিবর্তনগুলি ক্যান্সার বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে।

 আপনি যদি  ব্লগ বা ই কমার্স ওয়েবসাইট কিনতে চান। তাহলে আমদের সাথে যোগাযোগ করুন। ফেসবুক

1 thought on “ভাইরাস (Virus) কি। ভাইরাস কাকে বলে। ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য। ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা।”

Leave a Comment